আমরা সবাই মিলে একটা অসহায় মেয়ের বিয়েতে সহায়তা করেছি। এক্ষেত্রে তার ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য নয়। মুখ্য হলো আমাদের সদিচ্ছা। জাকাতের টাকায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক নারীর বিয়ের খরচের সিংহভাগ বহন করেছেন মাগুরার এক ব্যবসায়ী। ধুমধাম করেই বিয়ে হয়েছে পূর্ণিমা রাণীর।
আলোকসজ্জা, স্টেজ, ব্যান্ডপার্টি সবই হয়েছে পূর্ণিমার বিয়েতে। রবিবার (১৯ মে) রাতে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই তার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পরদিন সোমবার পূর্ণিমা চলে যান তার স্বামীর বাড়ি। পূর্ণিমা কর্মকারের বিয়েতে জাকাতের জন্য নির্ধারিত অর্থ ব্যয় করে অসাম্প্রদায়িকতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ রেখেছেন শহরের পারনান্দুয়ালী এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী।
এছাড়া, বিয়ের অনুষ্ঠানে সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পংকজ কুণ্ডু, পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুলসহ স্থানীয় অনেকেই।এ বিয়ের অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক অধ্যাপিকা পলি সাহা জানান, ৪ বছর আগে ক্যান্সারে ভুগে মারা যান পূর্ণিমার বাবা ক্ষিতিষ কর্মকার।
মা কিনু কর্মকার অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। এই অভাবের মধ্যেও পড়াশোনা থেমে থাকেনি পূর্ণিমার। তিনি জানান, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ী বিমল দাস পূর্ণিমাকে বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করলে আমি এবং আমার স্বামী তরুণ ভৌমিকসহ স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে পূর্ণিমার বিয়ের আয়োজন শুরু করি।
বিষয়টি জানতে পেরে এলাকার বিভিন্ন স্তরের মানুষ সাধ্যমতো সহযোগিতা করেন। পলি সাহা বলেন, পূর্ণিমার বিয়েতে নিজের জাকাতের টাকা থেকে একজন সহায়তা করেছেন। যা দেশের ধর্মীয় সম্পৃতির অনন্য উদাহরণ।
মাগুরা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. সাকিব হাসান তুহিন বলেন, আমরা সবাই মিলে একটা অসহায় মেয়ের বিয়েতে সহায়তা করেছি। এক্ষেত্রে তার ধর্মীয় পরিচয় মুখ্য নয়। মুখ্য হলো আমাদের সদিচ্ছা। আমরা পূর্ণিমার সুখী দাম্পত্য জীবন কামনা করি।
নতুন খবর হচ্ছে, বিয়ে করেছেন তরুণ-তরুণী। কিন্তু বিয়ের জন্য জমানো টাকা দিয়ে দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করলেন। পাত্র মাহসান স্বপ্ন পেশায় পুরোদস্তুর ইউটিউবার। কনে তৌহিদা অনয় একজন শখের মডেল। ৪ বছরের স’ম্পর্ক শেষে গত শুক্রবার প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে দুজনেই পরিণয়ে আবদ্ধ হন। বিয়ের এমন পরিকল্পনা স’ম্পর্কে জানতে চাইলে মাহসান বলেন, বিয়ে করার পরিকল্পনা পূর্বেই ছিল। সেই অনুযায়ী আম’রা টাকা পয়সা সঞ্চয় করেছিলাম। কিন্তু এখন মনে হলো সাদামাটা ভাবেও বিয়ে করা যায় আর সেই টাকা দিয়ে যদি মানুষের উপকার হয় খুব ভালো হয়। তাই বিয়ে করে ফেললাম। প্রথমে পরিবারের কেউ রাজি হচ্ছিল না, পরে রাজি হয়।
ঢাকাতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।’ মাহসান বিয়ের কথা জানিয়ে বলেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে শুক্রবারে সকাল ১০ টায় আমি এবং তৌহিদা অনয় বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হয়েছি। আমাদের বিয়ে করার প্ল্যান ছিল গত মাসের শেষে , কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে আম’রা এতদিন সেই কাজটি সম্পন্ন করিনি। আমা’র মা বাবা নেই, আত্মী স্বজনেরা ভিডিও কলে বিয়েতে অংশ নিয়েছে।’