প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একদা বলেছিলেন, ভারত-বাংলাদেশের সোনালি অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। সেই সোনালি অধ্যায় কেন জরুরি এবং কিভাবে তা রূপায়িত হতে পারে তা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ—এই দুই দেশের বহু সাংবাদিক বহু আলোচনা এরই মধ্যে করেছেন। বাংলাদেশের প্রায় ১৬ লাখ মানুষ ভারতীয় করোনা প্রতিষেধকের প্রথম ডোজ নিয়ে বসে রয়েছে। সময় পেরিয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের মধ্যেই দ্বিতীয় ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত জানিয়েছে, আপাতত প্রতিষেধকের সংকট এমন তীব্র যে একটি ডোজও পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। শেখ হাসিনা প্রকাশ্যে ভারতের এই অবস্থানের কড়া নিন্দা এখনো করেননি বটে; কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এ ঘটনায় ফুঁসছে এবং অসন্তোষ যে খুব তীব্র হয়ে উঠেছে সেটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আর ঠিক এ রকম একটা প্রতিকূল আবহের মুখোমুখি যখন আমরা দুই দেশ, তখন ভারত সরকার ঘোষণা করেছে যে যুদ্ধ মিউজিয়ামে থাকা ভারতের সমস্ত যুদ্ধের সব গোপন নথি তা ডি-ক্লাসিফাই করে দেওয়া হোক। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কারগিল ধরলে চার-চারটি যুদ্ধ হয়েছে। ১৯৬২ সালের চীনের আক্রমণ ভোলার নয়। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের যে চার-চারটি যুদ্ধ তার মধ্যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধটি বিশেষ তাৎপর্য। এ জন্য যে কারণে এটি একদিকে যেমন ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের ইতিহাসও এই যুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছে। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ঘিরেও দুই দেশের মধ্যে যেমন মৈত্রী এবং ভালোবাসার সম্পর্ক সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে—যাকে দৃঢ়ভাবে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশ সরকার সেই ১৯৭১-এর যুদ্ধের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান করে ভারতের সেই সময়কার বহু মানুষকে উপযুক্ত সম্মান প্রদান করেছে। কিন্তু এর পাশাপাশি বাংলাদেশের বেশ কিছু কূটনীতিক এবং সংবাদমাধ্যমের বেশ কিছু তৎকালীন সাংবাদিকের একটা অভিযোগ হলো, ভারত অনেক সময় এই মুক্তিযুদ্ধকে ইতিহাসের পাতায় কম গুরুত্ব দিয়ে ভারতের পাকিস্তানের সঙ্গে যে যুদ্ধ, সেটাকেই অনেক বড় করে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাতে মনে হয় যেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক ভারতের সেনাবাহিনী দিয়ে যুদ্ধ করে পাকিস্তানকে শায়েস্তা করা। ভারতের সেই যুদ্ধের জন্যই বাংলাদেশের সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করা সম্ভব হয়েছে। সেখানে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার যে ভূমিকা সেটি কোথাও খাটো করে দেখানো হয়েছে।
এ রকম একটা সময়ে মিউজিয়ামের সব নথি যখন ডি-ক্লাসিফাই করে দেওয়া হচ্ছে, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে যে কোন কোন নথি ডি-ক্লাসিফাই করা হবে? এবং সেগুলো নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কেন ভারত সরকার একটা আগাম আলোচনা করবে না?
এমন কোনো নথি যেটা ভারতীয় গোয়েন্দাদের বা মার্কিন গোয়েন্দাদের থেকে আসা, যেগুলো প্রকাশিত হলে ভারতের দিকে ঝোল টেনে যে ইতিহাস রচনার চেষ্টা, সেটা যেন গুরুত্ব বেশি না পেয়ে যায়। এমনটাই কিন্তু বাংলাদেশের বহু ঐতিহাসিক, বহু কূটনীতিক মনে করেন। ভারত কি সে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে?
আজ আমাদের আলোচনার মধ্যে তাই এই দুটি বিষয়ের মধ্যে কোথাও সংযোগসূত্র আছে। কেননা সেদিন আমার বাংলাদেশেরই একজন বন্ধু সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সময় বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ-উপরোধ করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেভাবে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান প্রতিষ্ঠাতার জন্মস্থান এবং মন্দির দেখতে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে কার্যত বাধ্য করল এবং সেই অনুরোধ-উপরোধকে অল্প সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে মানতে রাস্তাঘাট তৈরি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার সব রকম ব্যবস্থা করল—সেটা কিন্তু খুব সোজা কাজ ছিল না। সেই বন্ধুবর আমাকে বলছিলেন, বাংলাদেশ সরকার শুধু নরেন্দ্র মোদির অনুরোধ রক্ষা করার জন্য সেদিন সহযোগিতা করেছিল। আর আজ প্রতিষেধক না পাঠিয়ে কি তিনি উচিত কাজ করছেন? অর্থাৎ সমস্ত প্রটোকল, সমস্ত কূটনৈতিক বাধা-নিষেধ এমনকি বাংলাদেশের ভেতরেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতুয়া আশ্রমে যাওয়া নিয়ে যে রকমভাবে মৌলবাদীদের বিরোধিতা হয়, সেসব ভারত নিজের চোখে দেখেছে। এতৎসত্ত্বেও শেখ হাসিনা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন তার বদলে বাংলাদেশের এইটাই কি প্রাপ্য?
আমি নিজে ভারতের সাংবাদিক। আমি নরেন্দ্র মোদির সরকার বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না। আমি স্বাধীন মিডিয়ার প্রতিনিধি। তাই আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারি যে অন্য যেকোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের টিকা সরবরাহের সঙ্গে বাংলাদেশকে টিকা পাঠানো কিন্তু এক নয়। যাঁরা বলছেন, টিকা সরবরাহ বন্ধ বলে বাংলাদেশ ইলিশ পাঠায়নি। আমি সেই তর্কের সঙ্গেও একমত নই। তার কারণ প্রতিষেধক আর ইলিশ—এই দুটিকে এক পঙক্তিতে বসানো অযৌক্তিক। কেননা প্রতিষেধক একটা মানুষের জীবন এবং মৃত্যুর সঙ্গে যুক্ত। আর একটা মৌসুমে ইলিশ না খেলে মানুষ মারা যাবে না। কিন্তু প্রতিষেধক না পেলে মানুষের কী হতে পারে সেটা দুনিয়াজুড়ে আমরা দেখছি। দ্বিতীয় ঢেউয়ের কী পরিণতি তা বুঝতে পারছি। এই প্রতিষেধকের জন্য যে দাম, যে টাকা সেটা কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এরই মধ্যে চুকিয়ে দিয়েছে। দুটি ডোজেরই দাম চোকানো আছে। সুতরাং টাকা দেওয়া সত্ত্বেও কেন এই টিকা পাওয়া যাবে না সেটাই হলো সবচেয়ে বড় প্রশ্ন? এটা ঠিক যে বাংলাদেশ যাতে ভারতের টিকা নেয় তার জন্য প্রথমে করোনা প্রাদুর্ভাবের সময়ে পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় ছুটে গিয়েছিলেন। কেননা চীন তখন বাংলাদেশকে প্রতিষেধক দিতে প্রস্তুত। ভারত থেকে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা নিজে গিয়ে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেন তারা যাতে চীনের টিকা না নেয় এবং তার বদলে যাতে ভারতের টিকা নেয়। শেখ হাসিনা সরকার ভারতের সেই প্রস্তাব মেনে নেয়। তারপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করও গিয়ে এই একই রকমের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সুতরাং কোনো সন্দেহ নেই, ভারতের সাউথ ব্লকে এটা নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রসচিব দুজনেরই মুখ পুড়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখনো নরেন্দ্র মোদিকে বলছেন, অন্য দেশের সঙ্গে তুলনা না করে আমরা যদি অন্তত দিনক্ষণটা বলে দিই যে আমরা সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ঢাকাকে প্রতিষেধক দিতে পারব, তাহলেও ঢাকাকে আশ্বস্ত করা যায়। আমরা সে ব্যাপারেও কেন কোনো কমিটমেন্ট করছি না! কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন যে বাংলাদেশকে এই মুহূর্তে যদি প্রতিষেধক দেওয়া হয়, তাহলে কিন্তু দেশের ভেতরেই বিপদ হবে। তার কারণ এমনিতেই নানা দিক থেকে নরেন্দ্র মোদির সময় ভালো যাচ্ছে না। শুধু কভিড ম্যানেজমেন্ট নয়, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় বিভিন্ন ইস্যু—মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি; আমেরিকা, রাশিয়া, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েন। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে সামনের বছর উত্তর প্রদেশের নির্বাচন আসছে। তারপর লোকসভা নির্বাচন এসে যাচ্ছে। বিরোধীরা একজোট হচ্ছে। এ রকম সময়ে বাংলাদেশকে টিকা পাঠালে বিরোধী নেতৃত্ব রে রে করে উঠবে।
কিন্তু এটাও একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন অতিবাহিত হওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পর্ক শুরু করতে উৎসাহী। কলকাতায় বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে। একটা ঘটনা যে বাংলাদেশ তিস্তাচুক্তি রূপায়ণ নিয়ে আবেগকে সংযত রেখেছে। কিন্তু সেই দেশের রাজনৈতিক সূত্র সব সময় বলে, গত এক বছরে পর পর এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পক্ষে ভারতবিরোধী মেজাজটাকে সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। ইচ্ছা না থাকলেও ঢাকা চীনকে প্রতিষেধক ক্ষেত্র খুলে দিতে বাধ্য হচ্ছে। বেইজিংয়ের উপহার হিসেবে প্রায় ১১ লাখ ডোজ চীনা প্রতিষেধক ঢাকায় পৌঁছে গেছে। আরো ৩০ লাখ ডোজের দাম দেওয়া হয়ে গেছে। সেটাও শিগগিরই পৌঁছবে।
টিকার বিষয়টা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মার্চে ঢাকা সফরে সেই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বকে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর বাংলাদেশ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে টিকা রপ্তানি স্থগিতের সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হয়েছে। বাংলাদেশে টিকার ব্যাপারে যে বক্তব্য, যে আশ্বাস ভারতের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল এবং চীনকে টিকা ফেরত দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর ভারত এ রকম করতে পারে না।
বাংলাদেশকে ভারতের ভীষণভাবে প্রয়োজন। কেননা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো দেশের অন্যান্য প্রান্ত থেকে পণ্য পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। ভারতীয় পণ্যের যাত্রাপথের বড় অংশ বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা থাকে। সুতরাং সে দেশের মানুষের মন যদি ভারতের প্রতি বিগড়ে যায়, তাহলে কিন্তু দুই দেশের মধ্যে এই সোনালি অধ্যায় এক প্রবল বিপদের মুখে পড়বে।
সব শেষে একটা কথা বলব। মতুয়ার প্রতিষ্ঠাতার জন্মস্থানে মোদির যাওয়ার পর মৌলবাদীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। মোদি সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে মৌলবাদীদের একটা উগ্র কার্যকলাপ শুরু হয়ে যায়। এমনকি আলাউদ্দিন খাঁর বাসস্থান পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখানে তাঁর ব্যবহৃত অনেক জিনিসপত্র অগ্নিদগ্ধ হয়। শেখ হাসিনা কড়া হাতে এই হেফাজতিদের মোকাবেলা করেছেন। তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো রকম আপস করা হয়নি। সুতরাং জামায়াত যখনই খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে জোট করেছিল তখন এমন কথা অনেকে বলতে শুরু করেছিল যে হেফাজতিরা শেখ হাসিনার সঙ্গে হাত মেলানোর চেষ্টা করছেন। একটা নতুন মৌলবাদী শক্তি বাংলাদেশের মাটিতে মাথাচাড়া দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে তিনি কোনো রকম মৌলবাদের সঙ্গে আপস করতে রাজি নন। হেফাজতিদের গ্রেপ্তার করা, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরও ভারত যদি বাংলাদেশের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে আলাদা রকম কূটনীতির আচরণ প্রদর্শন না করে এবং অন্য সব ব্যাকরণকে দূরে সরিয়ে রেখে অবিলম্বে প্রতিষেধক না পাঠায়, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশের চেয়েও ভারতের ‘কূটনৈতিক ভবিষ্যতে’ অনেক বেশি বিপদ ঘনিয়ে আসবে।
লেখক : নয়াদিল্লিতে কালের কণ্ঠ’র বিশেষ প্রতিনিধি
বি’ষয়টি ব্যাখ্যা করে এ পরিচালক বলেন, ‘ইউটিউব, ফেসবুকে হিরো আলমের একটা জনপ্রিয়তা আছে। আমাদের শাকিব খান নাম্বার ওয়ান শাকিব খান। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমার জানামতে ইউটিউব, ফেসবুকে শাকিব খানের চেয়ে কম জনপ্রিয় নন হিরো আলম।
হিরো আলমের কিন্তু হলে দর্শক নেই। একদিনে তো আর শাকিব খান হয়নি, একদিনে মান্না হয়নি, তেমনি একদিনে হিরো আলমও হতে পারবে না। কিছুটা সময় লাগবে। সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’ হিরো আলম মিউজিক ভিডিওর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। নিজের প্রযোজনায় নির্মাণ করেছেন ‘সাহসী